আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থেকে আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্স জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আগে মাঙ্কিপক্স নামে অতি পরিচিত অত্যন্ত সংক্রমণ এ রোগে গণতান্ত্রিক অঙ্গপ্রজাতন্ত্রের অন্তত 450 জনের মৃত্যু ঘটেছে।
এশিয়া ও আফ্রিকার মত যে দেশগুলোতে সাধারণত এই ভাইরাস দেখা যায় না, তবে এটি এখন ১০০ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যার কারণে সারা বিশ্বে বর্তমানে এক ভয়ের নাম হয়ে উঠেছে এমপক্স।
এমপক্স – Mpox কী?
গুটি বসন্তের এই গোত্রের ভাইরাসের নাম হল এমপক্স। অনেক ক্ষয়ক্ষতি কারক এই ভাইরাস প্রথমে
এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তর হয়েছিল কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
এমপক্স বা মাঙ্কি পক্স নিয়ে বাংলাদেশে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মাঙ্কি বক্সের লক্ষণ দেখা গেলে সন্দেহজনক দ্রুত সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হট লাইন নাম্বারের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
হট লাইন নাম্বার – ১৬২৬৩ ও ১০৬৫৫
এমপক্স – Mpox এর লক্ষণগুলোঃ
এই রোগে আক্রান্তদের প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথা ব্যাথা, ফোলা, পিঠা এবং পেশীতে ব্যথা।
আক্রান্ত ব্যক্তি একবার জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাঁটুর তালু
এবং পায়ের শরীরের অন্যান্য অংশটা ছড়িয়ে পড়ে। অত্যন্ত চুলকানি ফুসকুড়ি গুলো পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন ধাপে ধাপ
পেরিয়ে গোল গোল পুরো আকারে পরিণত হয়ে। শেষে পড়ে যায়। এর ফলে দাক সৃষ্টি হয়। সংক্রমণের ১৪ থেকে
২১ দিনের মধ্যে এটি নিজে নিজে ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে ছোট শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য কিছু ক্ষেত্রে
এটি অত্যন্ত মারাত্মক। এর কারণে গুরুত্বের ক্ষেত্রে মুখ চোখ ও যৌনাঙ্গ পুরো শরীরের তৈরি হতে পারে।
এমপক্স – Mpox কিভাবে ছড়ায় ?
এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক শারীরিক স্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা
বা শ্বাস নেওয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি একজন থেকে অন্য জনের ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি ফাটা
চামড়া চোখ নাক মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে, বাইরে দূষিত হয়েছে। বিছানা পোশাক কাপড় চোপড় তোয়ালে
স্পর্শের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। বানর ইদুর কাঠবিড়াল সহ বিভিন্ন পোশাক প্রাণী মাধ্যমেও এম বক্স ছড়াতে পারে।
কেউ যদি এই সকল প্রাণীর সাথে খুব কাছাকাছি থাকে, সেক্ষেত্রে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন। 2022 সালে বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে,
জনসম্পর্কের মাধ্যমে ভাইরাসটি বেশি ছড়িয়েছে এবং বেশি মানুষ এ কারণেই মারা গিয়েছে। মারা যাওয়ার মধ্যে ১৫ বছরের শিশু সংখ্যা বেশি ছিল।
কারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এমপক্স এর ক্ষেত্রে ?
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি যে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ
এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করেছেন, এদের মধ্যে অল্প বয়সী শিশুরা থাকতে পারে।
কারণ একদিকে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক দুর্বল, অন্যদিকে অঞ্চলটির অনেকেই পুষ্টীয়তার অভাবে ভুগছে।
যার ফলে রোগ প্রতিরোধ করতে তারা পারছে না। এক্ষেত্রে 15 বছরের কম শিশুদের এই রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি।
তাছাড়া যারা যৌন সম্পর্ক করছে, সে ক্ষেত্রে তার কোন ব্যক্তির মধ্যে যদি এই এম বক্স থাকে তাহলে অন্য ব্যক্তির হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এর জন্য এমপক্স থেকে বাঁচতে ঘনিষ্ঠদের সাথে যোগাযোগ এবং ভাইরাস ছড়াতে পারে এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।
এমপক্স কি কোন টিকা আছে ?
এমপক্স এর টিকা আছে তবে তা ঝুঁকিতে আছে বা সংক্রমণ ব্যক্তির স্পর্শ থাকলে কেবল তারা এটি পেতে পারে।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো যাদের প্রয়োজন তাদের সবার কাছে টিকা পৌছাবার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এই মুহূর্তে নেই।
এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন না হলেও জরুরি ব্যবহারের জন্য দেওয়ার জন্য সম্প্রীতি ঔষধ
প্রস্তুতকার মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আর এখন যেহেতু আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জরুরি
স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করছে, আশা করা যায় এই প্রক্রিয়ার আরো ভালোভাবে সমন্বয় করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশের ইতিমধ্যে এম বক্স শনাক্ত হয়েছে যার কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিভিন্ন জায়গায়।
বিশেষ করে এয়ারপোর্টে তা জরুরি করা হয়েছে। তবে জনসাধারণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সজাগ টাকার আহ্বান জানিয়েছে।
কোন কোন দেশের এমপক্স ছড়িয়ে পড়েছে ?
পশ্চিম এবং মধ্যপ্রাচীর বিভিন্ন দেশে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে এবং বেশি দেখা যায় এই
অঞ্চলের প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয় এবং শত শত মানুষ মৃত্যুবরণ করে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫ বছরে কম বয়সী শিশুরা।
বর্তমানে অনেকগুলো দেশে বিভিন্ন সময় এর অবস্থান দেখা গিয়েছে, বিশেষ করে কঙ্গো এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে জুলাই শেষ পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫০ জনের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
এই সংখ্যা ২০২৩ সালে তুলনায় সংক্রমণের থেকে ১৬০% এবং মৃত্যুর ১৯ শতাংশ বেশি, অর্থাৎ দিন দিন এই ভাইরাস শক্তিশালী রূপ ধারণ করছে।
ইতিমধ্যে এশিয়া এবং আফ্রিকার মত দেশগুলোতে ভাইরাস দেখা না গেলেও অবশেষে গ্রুপ ১০০ টি দেশে একটি
ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে, তবে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে টিকা দেওয়ার মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
Leave a Reply